মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, লন্ডন থেকে :
যুক্তরাজ্যের কমিউনিটির সুপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মোহাম্মদ
সাজ্জাদ মিয়া এমবিই জানাজা মঙ্গলবার বাদ জোহর ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে । প্রধানমন্ত্রী , পরিকল্পনামন্ত্রী সহ বিভিন্ন মহলের শোক ।
যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান— আলহাজ্ব মোহাম্মদ সাজ্জাদ মিয়া এমবিই সম্মাননা পাওয়ার পর জীবদ্দশায় বলেছিলেন— “ কমিউনিটির সেবায় আরো কাজ করতে চাই, জীবনকে উৎসর্গ করতে চাই “ ।
যতদিন বেঁচে ছিলেন সাধ্যমত করেছেন। পৃথিবীর নিয়মেই ক্যান্সার নামক এই রোগে তার জীবন এখন থমকে গিয়েছে।
এখন শুধু তাঁর সৃষ্টিশীল কাজের স্মতিকথা মানুষের মুখে মুখে থাকবে। কারণ প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়, তিনিও তার ব্যতিক্রম হলেন না।
সোমবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং , সকাল ৫ টা ১১ মিনিটে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সাজ্জাদ মিয়া এমবিই ইন্তেকাল করেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সাবেক কাউন্সিলর, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা সাজ্জাদ মিয়া এমবিই মৃত্যুসময় তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর ।
প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ :
আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া এমবিই মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক লিখিত শোক বার্তায় পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন— বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সাধারণসম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।
পরিকল্পনা মন্ত্রীর শোক প্রকাশ :
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ব্রিকলেন জামে মসজিদের সভাপতি, আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া এমবিই এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান এমপি।
ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির শোক প্রকাশ : সাজ্জাদ মিয়া এমবিই মৃত্যুর সংবাদে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রেসিডেন্ট আনসার আহমদ উল্লাহ, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রবীন সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট এটিএম মনিরুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ শাহ সেলিম, সেক্রেটারী সাজিদুর রহমান, এসিসটেন্ট সেক্রেটারী আমিনুল হক ওয়েছ, ট্রেজারার মুহাম্মদ সালেহ আহমদ, এসিসটেন্ট ট্রেজারার এসকেএম আশরাফুল হুদা, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারি শাহ রুমি হক, সোসিয়াল ওয়েল ফেয়ার সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মীরু, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, জামাল খান, আনসার মিয়া ও সেলিনা আক্তার জোসনা প্রমুখ।
যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ ও অন্যান্যের শোক প্রকাশ :
সাজ্জাদ মিয়া এমবিই মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ এবং
যুক্তরাজ্য জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মাদ শামীম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ চন্দন মিয়া সহ বিভিন্ন সংগঠনের এবং কমিটির নেতৃবৃন্দ ।
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের শোক :
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মো. হরমুজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ।
আরো শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি হেলাল উদ্দিন আলী, ট্রেজারার হামিদুর রহমান চৌধুরী সহ কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও মরহুমের অনেক গুণগ্রাহী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমবেদনা জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগে শোকগাঁথা লিখে সমবেদনা জানিয়ে দোয়া করে শোক প্রকাশ লিখেছেন— সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবু সহ অনেকেই ।
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সংহিত সাহিত্য পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের, গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র চেয়ারম্যান শামসুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ দিলওয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ জোয়ারদার, ফুলবাড়ি ইউনিয়ন সোসাইটি ইউকে’র প্রেসিডেন্ট এমদাদ হোসেন
টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাহিন আহমেদ।
উল্লেখ্য সমাজকর্মী সাজ্জাদ মিয়া ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন। এরপর থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছিলেন। মহান মুক্তিসংগ্রামে প্রবাসে গড়ে উঠা আন্দোলন সংগ্রামে তার উপস্থিতি ছিল প্রায় প্রতিটি মিটিং – মিছিলে।
ব্রিটেনে আজকের ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গৌরব গাথা, অর্জন দৃশ্যমান। তবে অতীত এ রকম ছিল না, ছিল সংগ্রামের, লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হত।
কারণ বর্ণ বৈষম্য ছিল তুঙ্গে। আর তাই ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশন। বর্নবাদ বিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করে এই সংগঠন।
তারুণ্যের প্রতীক নিয়ে নিজে হাল ধরেছেন সংগঠনের ট্রেজারার হিসেবে। এরপর জেনারেল সেক্রেটারি, সর্বোচ্চ পদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কমিউনিটির সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
ব্রিটেনে বাংলাদেশী মুসলমানদের অন্যতম অর্জন ঐতিহাসিক ব্রিকলেন জামে মসজিদ।
খৃস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের চার্চ, ইহুদিদের সিনাগগের পর আল্লাহর ঘর মসজিদ স্থাপিত হয়। পূর্বে লন্ডন জামে মসজিদ ট্রাস্ট যা বর্তমান নাম হচ্ছে ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্ট।
১৯৭৮ সালে এর সদস্যপদ গ্রহন করেন সাজ্জাদ মিয়া। দীর্ঘ দিন মসজিদের সেবার মাধ্যমে ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন। আস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা প্রসারেও তার অবদান লক্ষণীয়।
১৯৮৪ সালে থমাস বাক্সটন প্রাইমারি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
১৬ বছর চেয়ার অফ গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮৮ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ল সেন্টারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ রাজনীতিতেও আবদান রাখেন সাজ্জাদ মিয়া। ১৯৯০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ওয়েভার্স ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে কমিউনিটির নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখেন।
তিনি অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে দেশে বিদেশে কমিউনিটির সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন।
২০১৫-২০১৭ সালে জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু করা হয় জিসিএসই ও এ লেভেল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান করা হয় , যা এখনো চলমন
জীবনের প্রথম ধাপ থেকে আজ পর্যন্তন কমিউনিটির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। আর তাই ২০২০ সালে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ কর্তৃক এমবিই খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তার জীবনের দীর্ঘ অর্জন সমাজের অন্যান্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার রসুলপুরের লাউতলা গ্রামের কৃতি সন্তান ।
মৃত্যুকালে তিনি ১ ছেলে ও ৪ মেয়ে সহ অসংখ্য আত্বীয়-সজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার ১ মার্চ ২০২২ ইং বাদ যোহর ব্রিকলেন জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মরহুমের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে রাসেল মিয়া কমিউনিটির সবাই কাছে পিতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
জ.টুডে/ মো: আব্দুল হাই