জগন্নাথপুর টুডে ডেক্স::
সিলেট বিভাগীয় শহরে দোকানপাট, ব্যবসা কেন্দ্র ও অফিস খোলা হয়েছে। মানুষও ঘর থেকে বেরিয়েছে। এরই মধ্যে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্তের রোগীর সংখ্যাও হাজার ছড়িয়েছে। বিশেষ করে সিলেট জেলায় অত্যধিক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
এদিকে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৫-এ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৫৫৫ জনের বেশি আক্রান্ত। আক্রান্তের পাশাপাশি এ বিভাগে মোট মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে সিলেট জেলায়ই মারা গেছেন ১৪ জন। আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে স্বাস্থ্য বিভাগে রীতিমতো উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষ বেশ আতংকে রয়েছেন। সিলেটে এখনো করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রের অবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। তাই দক্ষিণ সুরমায় নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজকে করোনা চিকিৎসার জন্য নেয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে সন্দেহ জনক অবস্থা নিয়ে অনেকেই শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতেও ভয় পাচ্ছেন। কারণ এখানে করোনা রোগী ভর্তি আছেন এবং ভিড় হলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। সিলেট বিভাগের শাবি ল্যাব ও ওসমানী হাসপাতাল ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হয়। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বা শামসুদ্দিনের ‘রেফারেন্স’ ছাড়া করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই। শাবিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। শাবিতে কোন রোগীর কাছ থেকে সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় না। ঐ ল্যাবে স্থাপনকৃত পিসিআর মেশিনে সিঙ্গেল সাইকেলে প্রতিদিন ৯৪ টি নমুনা শনাক্ত করা যায়। এতে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। একইভাবে ডাবল সাইকেলে করলে প্রায় ১৮৮টি নমুনা শনাক্ত করা সম্ভব।
বিভিন্ন স্থানে বুথ স্থাপন জরুরি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের সন্দেহভাজন করোনা রোগীরা যাতে সহজে নমুনা দিতে পারেন তার জন্য বিভিন্ন স্থানে ‘নমুনা সংগ্রহ বুথ’ স্থাপন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুযোগের অভাবে অনেকেই করোনা নিয়ে অবাধে ঘুরছেন, পরিবারের সাথেও মিশছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেশি করে বুথ চালু করলে ঘরে ঘরে সংক্রমণ হবে না। এসব ‘বুথ‘-এ গিয়ে সন্দেহভাজনরা নমুনা দিয়ে আসবেন কয়েক মিনিটে। আর পরের দিন মোবাইল ফোনেই জেনে যাবেন তার রিপোর্ট। তারা মনে করেন এটা বাস্তবায়নের জন্য শুধু সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। দক্ষিণ সুরমা এলাকায় কয়েকদিনের মধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নমুনা নেয়ার জন্য একটি ‘বুথ’ খেলা হবে জানিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আপাতত একাটি বুথ খেলার সিদ্ধান্ত হলেও প্রয়োজনে আরো কয়েকটি খোলা হবে।’
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহের জন্য উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলা উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটি বুথ স্থাপন করা হয় গত শনিবার। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের স্থাপনকৃত এ বুথ থেকে উপজেলার যে কোনো ব্যক্তি বিনামূল্যে তার নমুনা প্রদানের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন। কর্মকর্তারা জানান এই ‘বুথ’ স্থাপনের ফলে এই উপজেলার সন্দেহভাজনদের আর সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যেতে হবো না।
১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। তিনি সিলেটে প্রথম আক্রান্ত হন এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দেশের প্রথম চিকিৎসক। এবার শুক্রবার মধ্যরাতে মারা যান সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা রুহুল আমিন। করোনায় মারা যাওয়া দেশের প্রথম নার্স তিনি। অবশ্য ঐ নার্সের সন্তানদের পড়াশুনার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমএ মোমেন। সিলেটের আরও কয়েকজন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সিসিকের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আসমা কামরান করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে। সিলেটের যুবলীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।