জগন্নাথপুর টুডে ডেস্ক::
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবাকে হত্যা চেষ্টা ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আটক পাঁচ জনের তিনজনই যুবলীগের নেতাকর্মী।
আটককৃতরা হলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই ফরিদ হোসেনের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল হক (৩৫), উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৪), সিংড়া ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সভাপতি মাসুদ রানা (৩৫), ঘোড়াঘাট এলাকার রঙমিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম (৩১) ও ইউএনও’র বাসার নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশ (৩২)।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জেলার হাকিমপুর উপজেলার হিলির কালীগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুল হককে, ঘোড়াঘাট থেকে জাহাঙ্গীর হোসেন, মাসুদ রানা ও নাহিদ হোসেন পলাশকে আটক করা হয়।
আটক আসাদুল হক ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে, জাহাঙ্গীর হোসেন উপজেলার কোশিগাড়ি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে, মাসুদ রানা উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে, নবিরুল ইসলাম ঘোড়াঘাট সদরের বাসিন্দা ও নাহিদ হোসেন পলাশ আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের নৈশপ্রহরী।
আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিরুল ইসলাম ও হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর ও আসাদুলের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে হামলা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভূমি দখল, মাদকসেবন, মাদকের বিস্তারসহ বিভিন্ন অসামাজিক ও দস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি করোনার প্রভাবে কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলনের ওপর হামলা চালায় আসাদুলহক তাদের গ্রুপের অন্য সদস্যরা।
ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক নিরুপ সাহা বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় তাকে দলীয় পদ থেকে অপসারণের জন্য দিনাজপুর জেলা যুবলীগের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
দিনাজপুর জেলা যুবলীগ সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, গত ৭ জুন ওই আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিকের ডিও লেটারসহ অভিযুক্ত যুবলীগ আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ তার আনুগত্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
ঘোড়াঘাট পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, জাহাঙ্গীর, আসাদুলের নেতৃত্বে যুবলীগের নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা গোটা উপজেলায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, সরকারি কাজে বাধাদানসহ মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে দলের আস্থা ও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই ফরিদ হোসেন গত বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং-২। ইতোমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সরাসরি কিংবা নেপথ্যে কারা রয়েছে তা খতিয়ে দেখার সাথে সাথে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক বলেছেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছত্রছায়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। আসাদুল, জাহাঙ্গীর ও মাসুদ রানা গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস, মাদকের বিস্তার, সরকারি কাজে বাধা, ভূমি দখলসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এজন্য তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রকে একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু জেলা পর্যায় থেকে আজ পর্যন্ত চিঠির কোন উত্তর পাইনি। তেমনি কেন্দ্র থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই দস্যুদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, দেশবাসীসহ আমারও প্রশ্ন। আমিও সেটি জানতে চাই।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবাকে হাতুড়ি ও অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনা তদন্তে গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে আহবায়ক এবং রংপুর ডিআইজির একজন প্রতিনিধি এবং দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদকে তদন্ত কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মো. মাহফুজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে গোটা ঘোড়াঘাট উপজেলায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে জনমনে। আতঙ্কিত জনপদে পরিণত হয়েছে উপজেলা সদর। কেউ কারো সাথে খোলামেলা কথা বলছেন না। তবে প্রত্যাশা সকলের একটাই দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক।