ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৮ মার্চ, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৯ মার্চ এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৪ মার্চ। গতকাল বুধবার বিকালে নির্বাচন ভবনে কমিশনের এক সভায় এ তপশিল চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার কমিশনের সিদ্ধান্তের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে বুধবার তপশিল ঘোষণা করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি ইসি।
দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৮ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। এখনো সময় আছে। ইলেকশন কমিশনের অবস্থান থেকে সব দলকে নিয়ে ইলেকশন করতে চাই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তিন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। তবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভায় উপস্থিত ছিলেন না। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই সভাশেষে ইসির সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে এবার কত ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কমিশনের আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোজা, বৃষ্টি মৌসুম ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে ধাপ নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করার একটা প্রিন্সিপাল আছে। সে অনুযায়ী ল এনফোর্সিং এজেন্সি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সবই নিয়োগ করে থাকি। প্রয়োজনে বিজিবি নিয়োগ করব।’ তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে তিন-চারটি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য এক জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ, আইন-২০০৯-এর ২৯ (৩) এ বলা আছে, ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ঐ পরিষদের জন্য পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ অর্থাত্ চলতি মাসের ২১ মার্চের আগেই প্রথমধাপের ইউপি নির্বাচন আয়োজন সম্পন্ন করার কথা ছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় যথাসময়ে ভোট হচ্ছে না। এজন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের ২৯ (৫) ধারা প্রয়োগের জন্য বলা হয়েছে। ঐ ধারায় বলা আছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হইলে সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত যাহা আগে ঘটিবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা প্রদান করিতে পারবে।’ অর্থাত্ নির্বাচন কমিশন ২১ মার্চের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ইউপির ভোট করবে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ প্রথমধাপে ৭৫৫টি ইউপি নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছিল। ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপির মধ্যে ৪ হাজার ১০০-এর মতো ইউপিতে ভোট করা যাবে। ২০০ ইউপিতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে নয়বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ ও ২০১১ সালে ইউপি নির্বাচন হয়েছে। চলতি ২০২১ সালেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন। সূত্র-ইত্তেফাক