মো. আব্দুল হাই:-
মাত্র ২০(বিশ) টাকার পুঁজি দিয়ে শুরু করে ৪ বছরে ১০ লাখ টাকা মূলধন গড়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শ্রীরামসী চাঁদবৌয়ালী গ্রামের মো. আক্কাছ মিয়ার বড় মেয়ে ফেরদৌসী আক্তার লাবণী। লাবণী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লাভ করেছেন।
‘ স্টাইল ক্লসেট ’ নামে অনলাইন ব্যাবসার মালিক এই নারী উদ্যোক্তা । তবে এটি যতটাই না সহজ মনে হচ্ছে, শুরুটা ছিল তার জন্য ততটাই কঠিন। উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে শুরু থেকেই অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। তার মতো এভাবে অনেক নারীই সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে নানান প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
পরিবারের আপত্তির পরও লাবণী নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি আরও অনেক নারীকে স্বাবলম্বী করতে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। এতে করে বেকারত্ব লাঘব হয়েছে অনেক কর্মহীন নারীর।মেধা ও দক্ষতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী হাস্যজ্জল ধর্মভীরু ফেরদৌসী আক্তার লাবণী ২০১৭ সালে প্রথম এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন।
‘ স্টাইল ক্লসেট’র স্বত্ত্বাধিকারী লাবণী বলেন, আমার এই কর্মযজ্ঞে “অনেকেই সমালোচনা করেছেন, আবার অনেকেই চায়নি আমি উদ্যোক্তা হই। তাদের কথা হল, অনার্স-মাস্টার্স করে এসব করা মানায় না। সরকারি চাকুরী করতে হবে।কিন্তু আমি এসব সমালোচনা-নিন্দার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করিনি, গুরুত্ব দিয়েছি ব্যবসার প্রতি।
পাশাপশি ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করি। নতুন নতুন পণ্য এনে বিক্রি শুরু করি। লাবণী বলেন নারী হিসেবে প্রথমে অনেকেই অনেক কটু কথা বলেছেন, অনেক পাইকারী বিক্রেতা আমার সাথে কথা বলতে চান নি, সাহায্যও করতে চান নি। লাবণী সকল বাঁধা পেরিয়ে নিজ লক্ষ্যে অটুট থেকে আজ তার নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন লাভজনক এই ব্যবসাটি।
অনলাইন ব্যবসা যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ ছিল না। দিনের পর মাস এভাবে দুটি বছর লাবণী তার নিজের উদ্দ্যোগে ব্যবসা পরিচালনা করেন।লাবণী এক পর্যায়ে হাইট্যাকপার্ক বাংলাদেশ , বাংলাদেশ ইয়থ এন্টারপ্রাইজ এডভাইজ এন্ড হেল্প সেন্টার ( বি ওয়াই ই এ এইচ ) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( বাংলাদেশ ইনভেষ্টমেন্ট ডেভেলপম্যান্ট অথরেটি) এর একটি প্রজেক্ট ইন্টারপ্রেনারশীপ এন্ড স্কিল ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্ট ( ই এস ডি পি ), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে আরও বেশি উন্নত করেছেন।২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি এই অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। লাবণীর একটাই উদ্দেশ্যে ছিল চাকুরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেই কিছু একটা করবেন। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে তিনি বিভিন্ন পন্য নিয়ে ফেইসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন।
ধীরে ধীরে তার পরিসর দেশ ছাড়িয়ে প্রবাসে ছড়িয়ে পড়ে। প্রবাস থেকে বিভিন্ন গ্রাহক তার কাছ থেকে দেশীয় পন্য কেনাকেটা করে আসছেন।
লাবনী আরো জানান, এ ব্যাবসায় অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ তার ব্যবসার মূলধন বেড়ে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় পৌঁছে গেছে। প্রবাসে তিনি নিজ দেশীয় পণ্য সরবারহ করে দেশের সুনাম অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে সল্প পরিসরে হলেও অবদান রাখছেন লাবনী।
লাবণীর ‘ স্টাইল ক্লসেট ’এখন জামদানি,কাস্টমাইজ পণ্য, ব্লক, বাটিক, হাতের কাজের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, চাদর, নকশি চাদর, সুতার কাজের ওয়ান পিস সহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন।সমালোচনা থাকলেও সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়ে লাবণী বলেন, “বাব-মা’র অনুপ্রেরণায়ই আমার এগিয়ে যাওয়া। তাদের দোয়া, অজস্রস্নেহ ভালবাসা সহযোগিতা আমাকে প্রেরনা যোগিয়েছে।
লাবণীর তৈরি হস্তপণ্য, বুটিক পণ্য সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- জামদানি শাড়ি,ত্রি-পিস,নিজের ডিজাইনের পোশাক,নকশী কাঁথা ইত্যাদি।লাবণী ভবিষ্যতে অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসা থেকে থেকে শো-রুম প্রতিষ্ঠার জন্য আশাবাদী রয়েছেন। তিনি চান তার নিজস্ব শো-রুমে থাকবে নিজস্ব ডিজাইন করা পোশাক সহ দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য।
যাতে গ্রাহকরা শো-রুমে এসে কেনাকাটা করতে পারেন, সেই সাথে অনলাইনে তিনি আরও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আরও উন্নত করার কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা রেখে লাবণী বলেছেন, সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলা ভূমি বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যতটুকু সম্ভব দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অনলাইন ব্যবসা ‘ স্টাইল ক্লসেট ’ এর পণ্য সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন ই-মেইল- styleclosetlaboni01@gmail.com.