ব্রিটিশ বাঙালি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান শেরওয়ান চৌধুরীর বিলেতে এবার নান্দনিক ডানায় উড়াল দিলেন। মেইনস্টিমের রাজনীতি ও সমাজকর্মে নন্দিত করলেন গ্রেট ব্রিটেনের ব্রিটিশ বাঙালিদের মুখ।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের সবচেয়ে বড় বারা ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলার শেরওয়ান চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৪ মে ২০২১) যুক্তরাজ্য সময় বিকাল ৪ টায় তিনি ক্রয়ডনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । আগামী এক বছর ক্রয়ডন বারা এর দায়িত্ব পালন করবেন সিলেটের শেরওয়ান চৌধুরী। এখন থেকে তিনি ক্রয়ডন বারাতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
মঙ্গলবার তাঁর কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মেডি হেন্ডসন। এসময় শেরওয়ান চৌধুরীর গলায় ৫ কেজি ওজনের গোল্ড মেডেল পরিয়ে নতুন মেয়র হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়।
করোনা মহামারির কারণে মেয়র শেরওয়ান চৌধুরীকে বরণ করে নিতে মঙ্গলবার বিকেলে ক্রয়ডনের টাউন হলে লন্ডন সময় বিকেল ৪টায় সীমিত পরিসরে সরাসরি এক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্টানের মাধ্যমেই হস্তান্তর হয় দায়িত্বভার। এ সময় কাউন্সিলের ৭০ জন কাউন্সিলর ছাড়াও কমিউনিটির কর্তাব্যক্তিরা ভার্চুয়ালি অনুষ্টানে যোগ দেন। এই আনন্দঘন মুহূর্তে নবনির্বাচিত মেয়রের স্ত্রী রহিমা চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। এতে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বিলেতে শেরওয়ান চৌধুরীর রাজনীতির শুরুর কথা:
১৯৯০ সালের দিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে যোগ দেন তিনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে রাজনীতির অঙ্গনে পাকাপোক্ত করে নিতে সক্ষম হন।
১৯৯৪ সালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ক্রয়ডনের বেউলা ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন। স্থানীয়ভাবে একজন সফল কাউন্সিলর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন শেরওয়ান চৌধুরী। এইতো রাজনীতিতে কমিউনিটি এক্টভিস্ট হিসেবে নাও ভাসালেন, দীর্ঘদিন বৈঠী বাইলেন অত:পর তীরে পৌঁছলেন।
কাউন্সিলর থেকে আস্তে আস্তে মেয়র হলেন। ২০০৬ সালে নরবারি ওয়ার্ড থেকে পুণরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১০, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন কাউন্সিলর। এভাবেই মোট ৫ বার লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হিসেবে বিজয়ের মালা বরণ করে নেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন কাউন্সিলের তথ্যমতে, ক্রয়ডন কাউন্সিলে মোট ৭০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। একজন মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে একজন ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত করা হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর দল অর্থাৎ লেবার পার্টি থেকে তিনি ডেপুটি মেয়রের জন্য সিলেক্ট হন শেরওয়ান চৌধুরী। এরপর কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে ডেপুটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই পদ্ধতিতে এবার তিনি ক্রয়ডন বারার সর্বোচ্চ মেয়র পদে আসীন হলেন। এই বারার মোট ৩ লাখ ৮৪ হাজার ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে শেরওয়ান এক কন্যা ও দুই পুত্রের জনক। তাঁর স্ত্রী রহিমা চৌধুরী ক্রয়ডনের স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক।
উল্লেখ্য, সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকার চারিগ্রামের আব্দুর রকিব চৌধুরীর ছেলে শেরওয়ান চৌধুরী। তিনি ১৯৭৬ সালের দিকে যুক্তরাজ্যে আসেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে সেখানে গিয়েও যুক্ত হন রাজনীতির অঙ্গনে। তবে সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কোন শাখার সাথে যুক্ত না হয়ে সরাসরি ব্রিটিশ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং আজো বিলেতের মেইনস্টিমের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন।