জগন্নাথপুর টুডে ডেস্ক:
ভূমি আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির মামলায় সিলেটের শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ রায় দেন।
সিলেট জেলা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট শামিম আহমদ জানান, তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির একটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের পক্ষে বুধবার দুপুরে জামিন আবেদন শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো পাঁচটি ধারায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছিলেন। তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অপর আরেক মামলার রায়ে রাগীব আলী ও ছেলেমেয়েসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয় ঐ বছরের ৬ এপ্রিল। এ মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর উভয় মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত ২ আগস্ট আদালতে হাজির হলে বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) শুনানীর দিন ধার্য করা হয়। এখন ভূমি আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির মামলায় আবার করাগারে যেতে হলো রাগিব আলী ও তার ছেলে আবাদুল হাইকে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার এস এম আবদুল কাদের। মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয় রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।
তবে রাগীব আলীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সরকারপক্ষ আপিল করলে প্রায় এক যুগ পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান প্রকৃত মালিকের জিম্মায় দেওয়া ও দখলকরা ভূমিতে ওঠা সব স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশের পর ২০১৬ সালের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে দুটো মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এ প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী, সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ছেলে সহ সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। পলাতক রাগিব আলী ভারতে অবস্থানকালে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশে আসার পথে ভারতের করিমগঞ্জ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ঐদিনই সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে তার ছেলে আবদুল হাই ১২ নভেম্বর জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইলে গ্রেপ্তার হন।
এদিকে তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পৃথক আরেকটি মামলায় সিলেটের মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত রাগীব আলী, ছেলে, মেয়ে, জামাতা ও একজন নিকটাত্মীয়কে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ মামলায়ও আপিল করেছেন রাগীব আলী। এ ছাড়া ২ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে (১) বিচারাধীন। গত ১৭ মে এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়।
অন্যদিকে তার পরিচালনাধীন মালিনীছড়া চা-বাগানে টিলা কাটার অভিযোগে আলেচিত এই শিল্পপতিকে গত ৮ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং উইং শাখা ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে।
সুত্র: ইত্তে: বি ডি এন