জগন্নাথপুর টুডে ডেস্ক:
সিলেট নগরীতে দুটি এবং কানাইঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটিসহ তিনটি ধর্ষণের ঘটনায় বৃহত্তর সিলেট জুড়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে। পরপর তিনিটি ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের সচেতন মানুষ বিস্মিত। অনেকে বলছেন পাশবিক ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়া বা বিলম্বিত হওয়ার কারণে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দর্জিপাড়া এলাকায় সৎ বাবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে এক ইমাম। আর সিলেট শহরস্থ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসককে। এই তিন ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে সিলেটে। উঠেছে নিন্দার ঝড়।
ঘটনাগুলো প্রমাণ করে মানুষের আস্থার জায়গা নেই। সৎ বাবা, ইমাম আর চিকিৎসকই যদি ধর্ষণে জড়িয়ে যায় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? এমন প্রশ্ন করেছেন নগরীর অনেকে।
মানুষ বলছে, সমাজকে এই অন্ধকার থেকে বের করে নিরাপদ ভূমির জন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। মসজিদের ইমাম, চিকিৎসক কিংবা সৎ বাবা দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা এখনও বিরল। এ অবস্থায় সিলেটের এই তিন ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে। ইমাম সাহেবরা তো বিভিন্ন সময় ফতোয়া দিয়ে থাকেন। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান সচেতন নাগরিকরা।
এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের চাইতে দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর যারা আছেন তাদের দায়িত্ব বেশী। বিচারহীনতার কারণে এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।
ফারুক মাহমুদ বলেন, আগের ঘটনাগুলোর বিচার যদি তড়িৎ গতিতে হতো, তবে এসব ঘটনা ঘটতো না। এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সৎ বাবা যখন ধর্ষক: দশ বছরের শিশু সিলেট নগরীর একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার মায়ের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। মা বর্তমানে থাকেন সৌদি আরবে। তিনি প্রথমে বরিশালের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। ওই সংসারে জন্ম নেয় শিশুটি। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে শিশুটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন মা। কিছুদিন পর বগুড়ার গাবতলি থানার সরধনকুঠি গ্রামের পিটু মিয়াকে (২৮) বিয়ে করেন ঐ নারী। গেল বছর সৎ বাবা পিটু মিয়ার কাছে নিজের শিশুকন্যাকে রেখে সৌদি যান তিনি।
ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে নগরীর দর্জিপাড়ায় থাকতেন পিটু। পুলিশ সূত্র জানায়, গত প্রায় দুই মাস ধরে ওই শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করছিলেন পিটু মিয়া। কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলার ভয়ও দেখাচ্ছিলেন পিটু। গত ১৩ জুলাই দিবাগত রাতেও শিশুটিকে ধর্ষণ করেন তিনি। শনিবার সকালে মারপিট করে শিশুটিকে গোসল করিয়ে বাইরে যান পিটু। ভীতসন্ত্রস্ত শিশুটি পাশেই এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে তার মাকে সব খুলে বলে। ওই বান্ধবীর মা শরণাপন্ন হন পুলিশের।
শনিবার দিবাগত রাতে পিটু মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, পিটু মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শিশুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
ইমামের কাছে শিশু ধর্ষিত: গত ১৫ জুলাই স্কুল ছুটির পর থেকে নিখোঁজ ছিল জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকার পশ্চিম মহল্লার চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজে, পুকুর-ডোবায় তল্লাশি চালিয়েও মিলছিল না তার সন্ধান।
সন্ধ্যার পর স্থানীয়দের সন্দেহ হলে মসজিদের ইমামের কক্ষে তল্লাশী চালানো হয়। সেখানেই কক্ষের খাটের নিচের হাত-পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় শিশুটিকে। এর আগে হাসান আহমদ (২৫) নামের ওই ইমামের ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি।
জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলছেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসান আহমদ জানিয়েছেন, স্কুল ছুটির পর ওই শিশুটিকে ডেকে নিয়ে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। হাসানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধর্ষণের অভিযোগে চিকিৎসক গ্রেফতার: অসুস্থ নানির সঙ্গে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন আগে এসেছিল নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। গত ১৫ জুলাই রাতে সেখানেই ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী ধর্ষণ করে মেয়েটিকে- এমনই অভিযোগে ঐ ইন্টার্ন চিকিৎসককে ওসামানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে তুলে দেয় গত মঙ্গলবার। ইন্টার্ণ চিকিৎসক বর্তমানে সিলেট জেল হাজতে। মাহীর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়।
ওই মেয়ের বাবা এই ঘটনায় কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহী। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় সোমবার মাহীকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়। ওই কিশোরী ওসিসিতে ভর্তি রয়েছে।
ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন: ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সোমবার রাতে। তদন্ত কমিটির প্রধান ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. এনকে সিনহা। কমিটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করার কথা। সূত্রমতে ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে।
নগরীর কোতোয়ালী থানার সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর মঙ্গলবার বিকালে ইত্তেফাককে জানান, আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত মাকামে মাহমুদ মাহীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান মামলার তদন্ত চলছে। ডিএনএ পরীক্ষার আগে ধর্ষণ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা সঠিক হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঐ ডাক্তার ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত কিনা বা তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা ইত্যাদি বিষয়েও পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলে তিনি জানান।
সুত্র-ইত্তে:/বিডিএন