সর্বশেষ সংবাদ:
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের উদ্যােগে জগন্নাথপুরে মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বাঁধের ২৮নং পিআইসির কাজ শুরু জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের উদ্বোধন ধনিয়া টাইগারস ইকড়ছই ক্রিকেট ক্লাবের টিম ডাইরেক্টর ইমরান উদ্দিনকে সংবর্ধনা জগন্নাথপুরের কৃতি সন্তান ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ইশমাম’কে সংবর্ধনা হালিমা খাতুন এডুকেশন ট্রাস্ট’র ১৮তম বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ জগন্নাথপুরে রাইজিং ওয়ারিয়র্স ক্রিকেট ক্লাবের ২০২৪-২০২৫ মৌসুমের জার্সি উন্মোচন করা হয়েছে জগন্নাথপুরে স্টুডেন্ট কেয়ারের শীতবস্ত্র বিতরণ স্পেন বিএনপি নেতা এম এ আজিম উদ্দিনকে জগন্নাথপুর বিএনপি নেতৃবৃন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা মিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় ভাংচুরের মামলায় আওয়ামীলীগের ৩ নেতার জামিন না মঞ্জুর 

৬৭ বছরে ইত্তেফাক, ঐতিহ্যের পথ ধরে তারুণ্যের আলোয়

ডেক্স রিপোর্ট::
আজ দৈনিক ইত্তেফাক ৬৭ বছরে পা দিল। ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইত্তেফাক দৈনিক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী এই সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দৈনিক ইত্তেফাক হয়ে উঠেছে গণমানুষের মুখপত্র। দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন, পাঠকদের আস্থা ও সীমাহীন ভালোবাসাই ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের সুদীর্ঘ পথচলার শক্তি ও সাহস।

সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সময়ের দাবি মেটানো। সেই দিক থেকে দৈনিক ইত্তেফাক তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সময়ের দাবি মিটিয়ে এসেছে। সহজ করে বললে, মানুষের অধিকরের কথা বলে এসেছে। আজ এত বছর পরে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন-লালিত যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, দৈনিক ইত্তেফাক সেই জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিল। সেই পথ ছিল অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সৎ সাংবাদিকতা ছিল সেই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার মন্ত্র। সৎ সাংবাদিকতার সেই মন্ত্র ইত্তেফাক আজও হৃদয়ে ধারণ করে চলেছে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সময়কাল থেকে যা শুরু হয়েছে, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে আসার পর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সেই দায়ভার ইত্তেফাক বহন করে চলেছে, ভবিষ্যতেও বহন করে যাবে।

মূলত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও দৈনিক ইত্তেফাক এই ত্রয়ী এক হয়ে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এক সর্বোচ্চ সীমাকে স্পর্শ করেছিল। তারই পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ দৈনিক ইত্তেফাকের নিরন্তর প্রেরণার উৎস। আজকের শুভক্ষণে তাই দৈনিক ইত্তেফাক গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে নিহত শহিদদের, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাঁদের ত্যাগ, পরামর্শ ও ভালোবাসায় দৈনিক ইত্তেফাক কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে এসেছে, তাদের আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

দৈনিক ইত্তেফাক তাই আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে। তাদের সীমাহীন প্রেরণা, ভালোবাসা ও ত্যাগের বিনিময়ে দৈনিক ইত্তেফাক এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসার শক্তি পেয়েছে। আমরা স্মরণ করছি ইত্তেফাকের সঙ্গে যুগে যুগে যুক্ত থাকা সব সাংবাদিক, কর্মচারী ও কর্মীদের, যাদের নিরলস পরিশ্রম এই প্রতিষ্ঠানকে সচল রেখেছে।

১৯৭১ সালের ১ মার্চের সামরিক আইনের বিধান অগ্রাহ্য করেই ইত্তেফাক পত্রিকা সেই সময়কার অসহযোগ আন্দোলনের খবর নিয়মিতভাবে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। অথচ সরকার আপত্তিকর সংবাদ পরিবেশনের দায়ে ১০ বছরের কারাদন্ডের বিধান করেছিল। কিন্তু দৈনিক ইত্তেফাক তার কোনো তোয়াক্কা করেনি। মানুষের মুক্তির প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে অস্থিত্ব বিলীনের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন জুগিয়ে যায়। ইত্তেফাকের এই ভূমিকা উপমহাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ২৫ মার্চ রাতে দৈনিক ইত্তেফাক ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্থানি সামরিক জান্তা অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে দৈনিক ইত্তেফাককেও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় বারবার ধ্বংসস্ত’প থেকে মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।

মুক্তিযুদ্ধের পরে নতুন বাস্তবতায় দৈনিক ইত্তেফাক নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হচ্ছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ইত্তেফাক জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়েছে। দেশ গড়ার নতুন সংগ্রামে নেমেছে। রাজনৈতিক মুখপত্রের বলয় থেকে বেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তাদের সাংবাদিকতা অগ্রসর হচ্ছে এখন। সময়ের দাবি মেটাতে ইত্তেফাকের বিন্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সত্য, ন্যায়, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে ইত্তেফাকের অবস্থান প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো বদলায়নি।

দৈনিক ইত্তেফাক কখনোই বাণিজ্যের জন্যে কিংবা কাউকে সমাজে হেয় করার জন্য সংবাদ পরিবেশন করেনি। ইত্তেফাক কখনোই রাগ-বিদ্বেষ চরিতার্থ করতে সংবাদ পরিবেশন করেনি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ইত্তেফাকের সেই পুরনো আদর্শই এখনো একমাত্র সম্পাদকীয় নীতি। আর তা হলো, নিরপেক্ষ এবং নির্ভীক সাংবাদিকতার ধারা অনুসরণ এবং গণমানুষের মনে স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখা, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের সঙ্গে আপস না করা এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অবিচল থাকা। দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশনার প্রথম দিন থেকে এ নীতির পথ থেকে সরে আসেনি।

বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে দৈনিক ইত্তেফাক এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে আপোষহীনভাবে সত্য প্রকাশ করে গেছে। এটাও অনস্বীকার্য যে, দৈনিক ইত্তেফাক আর এই সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন সমার্থক। বস্তুত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার গণতন্ত্রের প্রতি অনমনীয় অবস্থান, ক্ষুরধার লেখনী দৈনিক ইত্তেফাকের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। মানিক মিয়ার মানস দর্পণ ছিল যেন ইত্তেফাকের প্রতিটি পৃষ্ঠা। নীতির প্রশ্নে, বাংলার মানুষের অধিকারের বিষয়ে তিনি কখনো আপস করেননি।

দৈনিক ইত্তেফাক ছিল তার সেই সংগ্রামী জীবনের প্রধান হাতিয়ার। গণমুখী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ ব্যক্তিত্ব দেশের সাংবাদিকতাকে একটানে বদলে দিয়েছিলেন। মানুষের প্রত্যাশা, বেদনাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে জীবনব্যাপী তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

একসময়ে তদানীন্তন পাকিস্থান সরকারের সামরিক শাসক দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের সঙ্গে আপস করলে মানিক মিয়া ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবং তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংবাদিক শ্রেণি জনমানুষের সংবাদপত্রের প্রতি যে বিশ্বাস তার সঙ্গে আপস করেননি। তিন বছর পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রেখেছিলেন। পত্রিকার সাংবাদিকরাও অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছিলেন কিন্তু কেউই মাথা নোয়ায়নি। মানিক মিয়ার আদর্শের প্রতি প্রত্যেকে সামরিক জান্থা ও স্বৈরাচারী শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

১৯৬৬ সালের ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবি করে। দৈনিক মর্নিং নিউজ, দৈনিক পাকিস্থান ও দৈনিক আজাদ ৬ দফার বিরোধিতা করে। দৈনিক ইত্তেফাক ৬ দফার পক্ষে অবস্থান শুধু নয়, অন্যতম প্রচারকের ভূমিকা পালন করে। ১৬ জুন ১৯৬৬ ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন গ্রেফতার হন ও পরদিন পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি নিউ নেশন প্রেসও বন্ধ করে দেয়। প্রায় দশ মাস পর ১৯৬৭ সালের ২৯ মার্চ মানিক মিয়া মুক্তি পান। এ সময় দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।

কিন্তু সম্পাদক সাফ জানিয়ে দেন—‘ইত্তেফাক যদি তার ঐতিহ্য অনুসরণ করে প্রকাশিত হতে না পারে তবে তিনি সে ইত্তেফাক প্রকাশে আগ্রহী নন।’ অবশেষে প্রেস মুক্ত হয়। ১০ ফেব্রæয়ারি ইত্তেফাক পুনর্জন্ম লাভ করে। ১৯৬৯ সালে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আকস্মিক ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত থাকে এবং বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি সমর্থন দেয় ও সম্পাদকীয় সচিত্র প্রতিবেদন, ফিচার প্রকাশপূর্বক নানাভাবে সমর্থন দেয়, গড়ে ওঠে জনমত। বিশেষ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচন, আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্থানিদের অনীহা ও ষড়যন্ত্র এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ও সর্বাত্মক অসহযোগের আহ্বান থেকে ২৫ মার্চ রাতে আক্রান্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক অনন্য সাধারণ ও গৌরবময় ভূমিকা পালন করে।

Spread the love

এ জাতীয় আরো খবর


পুরাতন সংবাদ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

Like us on Facebook