জগন্নাথপুর টুডে ডেস্ক:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে শিশুসহ মহিলার নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ঘটনাটি ঘটে ১৪ মে সোমবার সকাল ৮টায় উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্বগাটিয়াডাঙ্গা হাঙ্গরমুখ কাদিরিয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা মাঠে।
নিহতরা হলেন, লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের মো. শফির স্ত্রী নুর জাহান(২২), একই এলাকার আবদুস ছালামের মেয়ে টুনটুনি বেগম (১৫), আবদুল করিমের স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৫), আজম আলীর মেয়ে ফাতেমা বেগম (১৬), সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের নুর আহমদের স্ত্রী রশিদা আকতার (৫০), একই উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের মোবারক হোসেনের মেয়ে সাকি আকতার (২৪), একই এলাকার হাসান ড্রাইভারের স্ত্রী রিনা বেগম (৪০), মোহাম্মদ ইসলামের স্ত্রী হাসিনা আকতার (৪০), বান্দরবান জেলার সোয়ালক এলাকার কায়েস আলীর স্ত্রী নুর আয়শা বেগম (৪০) ও আবদুল হাফেজের স্ত্রী জোৎস্না বেগম (৫৪)।
পদদলিত হয়ে আহতদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন মোস্তফা খাতুন (৬০), নুর আয়শা (৫০), হোসনে আরা বেগম (৪৫), জুনু মিয়া (৪০), রাজিয়া বেগম (৫৫), রোকেয়া বেগম (৩৫), দিরুয়ারা বেগম (৪০) ও মোহাম্মদ সাকিব (১২)।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের গাটিয়াডাঙ্গা এলাকার কেএসআরএম গ্রুপের মালিক আলহাজ্ব শাহজাহান এলাকার দুস্থদের মাঝে চাউল, শাড়ী, ১ হাজার টাকাসহ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। তার ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে ১৪ মে এলাকায় ইফতার সামগ্রী বিতরনের দিন ধার্য্য ছিল।
ইফতার বিতরনের কথা শুনে মাদ্রাসা মাঠে আগের দিন থেকে মহিলারা জমায়াত হতে থাকে। সকালে ইফতার সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হলে হুড়াহুড়ি করে প্রবেশ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
ঘটনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন, পুলিশ সুপার নুর-ই-আলম মিনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম এমরান ভূঁইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিপাঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা, সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রফিকুল হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান তসলিমা আকতার প্রমুখ।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, নিহতদের মধ্যে যাদের স্বজন মামলা করবে সেসব লাশের ময়নাতদন্ত হবে। আর যারা মামলা করবে না তাদের লাশ স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
ইফতারসামগ্রী দাতা ও কেএসআরএম গ্রুপের মালিক আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর দুস্থদের সাহায্যের লক্ষ্যে সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে ইফতার সামগ্রী বিতরণের পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। মানুষের ধৈর্যহীনতার কারণে এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা দুঃখজনক। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে নগদ অনুদান দেয়া হবে।
পুলিশ সুপার নুর-ই-আলম মিনা জানান, ইফতার সামগ্রী বিতরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ইফতার সামগ্রী বিতরনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তাদের সামগ্রী বিতরনে নিরাপত্তার যথেষ্ট ত্রুটি ছিল। তিনি আরো জানান, একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।